টেকনিক্যাল এনালাইসিস হল বিগত দিনের
মার্কেট চার্ট পড়ে পরবর্তী মার্কেট মুভমেন্ট কি হতে পারে তা বের করার বা বোঝার
একটি পদ্ধতি। এটি হল বিভিন্ন চার্ট, ট্রেডিং টুল এবং মার্কেট তথ্যের উপর ভিত্তি করে
ভবিষ্যৎ মার্কেট মুভমেন্ট কি হবে তার একটি সহজ সার্বজনীন ট্রেডিং পদ্ধতি। এতে করে
ট্রেডাররা পূর্বের মার্কেট ডাটা এনালাইসিস করে পরবর্তী ট্রেড করতে পারে। বিশ্বের
সব ট্রেডারদের কাছে এই পদ্ধতিটি খুবই জনপ্রিয়। কেউ কেউ এই পদ্ধতিকে ট্রেড উইথ
হিস্টরিকেল ডাটা বলে থাকে। বিষয়টা আসলে আমাদের পরীক্ষায় প্রস্তুতি সরূপ, বিগত বছরের প্রশ্ন অনুসারে পরবর্তী বছরের পরীক্ষার জন্য রেডি হওয়া বা
পরীক্ষা দেওয়াটা যেমন ভাল ফলাফলের একটি সহজ পদ্ধতি, এই
ট্রেডারদের কাছে এমন একটি ট্রেডিং হাতিয়ার। আশা করি এতক্ষণের আলোচনায় টেকনিক্যাল
এনালাইসিস ধারণাটা পেয়ে গেছেন।
টেকনিক্যাল এনালাইসিস ৩টি বিশেষ নীতির
মাধ্যমে কাজ করে থাকে।
১।
মার্কেট অ্যাকশন
২।
ট্রেন্ডে প্রাইস মুভমেন্ট
৩। ইতিহাস পুনরাবৃত্তি
চার্টঃ
====================================================
টেকনিক্যাল এনালাইসিসের ৩টি জনপ্রিয় চার্ট
হল-
১। লাইন
চার্ট
২। বার
চার্ট
৩। ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট
তার মধ্যে ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট বেশির ভাগ
ট্রেডারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আমরা ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট নিয়েই আলোচনা করব।
জাপানিজ রাইস ট্রেডার Homma-এর কাছ থেকে ক্যান্ডেলস্টিক ধারণাটি ফরেক্স
মার্কেটে আসে। যা লম্বালম্বিভাবে উভয় দিকে একটি রেখা (Stick) সহ ব্লকের মাধ্যমে অঙ্কিত একটা ক্যান্ডেলের মত দেখতে তাই এর নামকরন
ক্যান্ডেলস্টিক। এই চার্ট টাইপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি দিনের বা ভিন্ন ভিন্ন
সময়ের মার্কেট প্রাইস তথা ওপেন, ক্লোজ, হাই এবং লো ইত্যাদি দেখা যায়। এই ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট অনেকরূপে অনেক
ধরণের মার্কেট মুভমেন্ট ডিরেকশন দেয়।
ট্রেন্ডঃ
====================================================
ট্রেন্ড হল মার্কেটের একটি স্বাভাবিক
গতিবিধি (মুভমেন্ট), একটি মার্কেট ট্রেন্ড কখনও স্ট্রেইট (সোজাসুজি) গতিতে চলে না। মার্কেট
সব সময় প্রগতিশীল অর্থাৎ কখনও ঊর্ধ্বমুখী বা কখনও নিম্নমুখী এবং মাঝে মাঝে
সমান্তরাল। যদি প্রত্যেক ক্রমানুযায়ী আপ মুভমেন্ট আগের নিম্নমুখী ট্রেন্ডের আরও
নিচের দিকে মোড় নিতে শুরু করে তখন মার্কেটের নিম্নক্রম প্রবনতা বলে ধরা যায়। আবার
প্রত্যেক ক্রমানুযায়ী ডাউন মুভমেন্ট আগের ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ডের আরও উপরের দিকে মোড়
নিতে শুরু করে তখন মার্কেটের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বলে ধরে নেওয়া হয়। এটাই আসলে
মার্কেটের প্রকৃত চিত্র।
সাপোর্ট এন্ড রেসিসটেন্সঃ
====================================================
টেকনিকেল এনালাইসিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
দুটি মৌলিক ধারণা হল সাপোর্ট এবং রেসিসটেনস। অর্থনীতির ভাষায় মার্কেটের চাহিদা এবং
যোগানের দুটি মিলিত পয়েন্ট হচ্ছে এই সাপোর্ট এবং রেসিসটেনস। ফরেক্স মার্কেট যেহেতু
অর্থনির্ভর একটি মার্কেট তাই এই ধারণাটি এখানে বেশ মূল্যবান। সঠিক সাপোর্ট এবং
রেসিসটেনস নির্ধারণের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কখন ট্রেডে ঢুকবেন এবং কখন ট্রেড
থেকে বের হবেন এবং কি পরিমাণ লাভ করবেন কিংবা লস হলেও তা কি পরিমাণ। অর্থাৎ
ট্রেন্ড এনালাইসিসের মাধ্যমে সাপোর্ট এবং রেসিসটেনস লেভেল নির্ধারণের মাধ্যমে সঠিক
সময়ে ট্রেড ওপেন এবং ট্রেড ক্লোজ করতে পারবেন।
সাপোর্ট
এন্ড রেসিসটেন্স লেভেল নির্ধারণঃ
====================================================
সাপোর্ট এন্ড রেসিসটেন্স সবসময়
পরিবর্তনশীল কতগুলো লেভেল যা কখনও একটি লেভেলে স্থির থাকে না। আপট্রেন্ড মার্কেটের
প্রত্যেকটি সর্বোচ্চ চুড়া হচ্ছে এক একটি রেসিসটেনস লেভেল এবং ডাউন ট্রেন্ডের
সর্বনিম্ন প্রত্যেকটি পয়েন্টই হচ্ছে এক একটি
সাপোর্ট লেভেল।
আপ মার্কেট ট্রেন্ডে পূর্ববর্তী রেসিসটেনস
ব্রেক করলে পরবর্তী সাপোর্ট লেভেল রেসিসটেনস হিসেবে কাজ করে আবার ডাউন ট্রেন্ড
মার্কেটে পূর্ববর্তী সাপোর্ট ব্রেক করলে পরবর্তী রেসিসটেনস লেভেল সাপোর্ট হিসেবে
কাজ করে।
সাপোর্ট যখন ব্রেক করে প্রাইস তখন আরও
কমতে থাকে এই অবস্থায় সেল ট্রেড করে প্রফিট করা যায় আবার রেসিসটেনস যখন ব্রেক করে
পাইস তখন আরও বাড়তে থাকে ওই অবস্থায় বায় ট্রেড করে প্রফিট করা যায়।
আর সাপোর্ট যখন ব্রেক না করে টাচ করে তখন
বায় ট্রেড করে প্রফিট করা যায় এবং রেসিসটেনস যখন ব্রেক না করে টাচ করে তখন সেল
ট্রেড করা যায়। এই ধরণের ট্রেডকে সুয়িং ট্রেড বলা হয় অর্থাৎ সুযোগ সন্ধানী ট্রেড।
রেঞ্জবাউন্ড
ট্রেডিং:
====================================================
যখন একটি নির্দিষ্ট বাউন্ডারি বা এরিয়ার
ভেতর মার্কেট মুভমেন্ট তথা ট্রেডিং পরিচালিত হয় তাকে রেঞ্জবাউন্ড টেডিং বলে। মূলত
৮০% সময় এ সিস্টেমে মার্কেট পরিচালিত হতে দেখা যায়। কারণ সবসময় মার্কেট ভলাটিলিটি
হাই থাকে না। রেঞ্জবাউন্ড ট্রেডিং অনেক ট্রেডারদের কাছে খুব্ই জনপ্রিয় একটি মেথড।
এই পদ্ধতিতে ট্রেডারকে অবশ্যই ট্রেডিং রেঞ্জ এরিয়া অর্থাৎ দুটি এক্সট্রিম ট্রেডিং
লেভেল (সাপোর্ট অ্যান্ড রেসিসটেনস) বুঝতে হবে।
মার্কেট অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট
এরিয়া অর্থাৎ একটি স্ট্রং সাপোর্ট অ্যান্ড রেসিসটেনসের মধ্যে বাউনসিং করে। সাধারণত মার্কেট একটি হাই ভলাটিলিটি শেষে এই ধরণের রেঞ্জে মুভ করতে
থাকে। অথবা মার্কেটে যদি কোন স্ট্রং প্রেসার না থাকে তখনও এই ধরণের রেঞ্জিং দেখা
যায়।
মার্কেট মুভমেন্ট যখন কোন সাপোর্ট বা
রেসিসটেনস লেভেল ব্রেক করতে পারে না তখন এই পদ্ধতিতে আপনি বায় অর্ডার করতে পারেন
যখন প্রাইস সাপোর্ট লেভেলের কাছাকাছি এবং সেল করতে পারেন যখন প্রাইস রেসিসটেনস
লেভেলের কাছাকাছি। সাপোর্ট লেভেলের নিচে এবং রেসিসটেনস লেভেলের উপরে ১৫-২০ পিপস স্টপ
লস সেট করবেন এবং প্রফিট নিতে পারেন ৩০ পিপসের মত। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় ৩-৪টি
সাপোর্ট এবং রেসিসটেনস বাউনসিং-এর পর তা ব্রেক করে তাই সতর্ক থাকবেন।
ট্রেন্ড
লাইনঃ
====================================================
ট্রেন্ড সনাক্তকরণ, ট্রেন্ড নিশ্চিত হওয়া
এবং ট্রেন্ড ইন্টেনসিটি পরিমাপের জন্য ট্রেন্ড লাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টুলস।
মেটাট্রেডারের টেন্ডলাইন টুল দিয়ে ট্রেন্ডলাইন আঁকতে হয়। সঠিক ট্রেন্ডলাইন ড্রর
মাধ্যমে সঠিক এবং নিখুঁত ট্রেড করতে পারা যায়। ফরেক্স মার্কেটের যেকোন চার্টে আপনি
৩ ধরণের ট্রেন্ড লাইন পাবেন এবং আঁকতে পারবেন।
১।
আপট্রেন্ড (বুলিশ) লাইন আঁকার নিয়মঃ
====================================================
ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ডের দুই বা তার অধিক লো
পয়েন্টগুলোকে একটি লাইনের মাধ্যমে কানেক্ট করতে হয়।
২।
ডাউনট্রেন্ড (বেয়ারিশ) লাইন আঁকার নিয়মঃ
====================================================
নিম্নমুখী ট্রেন্ডের দুই বা তার অধিক হাই
পয়েন্টগুলোকে একটি লাইনের মাধ্যমে কানেক্ট করতে হয়।
৩।
সাইডওয়ে ট্রেন্ড (সমান্তরাল):
====================================================
সাইডওয়ে ট্রেন্ড হল মার্কেটের তেমন কোন
মুভমেন্ট ছাড়া সমান্তরাল একটি গতি। ছোট ছোট ঢেউয়ের মত একটি গড় সমান্তরাল মিনি
ট্রেন্ড। অনেক ট্রেডাররা সাইডওয়ে ট্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করে মার্কেটে প্রবেশ করার
জন্য, কারণ সাইডওয়ে ট্রেন্ড হচ্ছে পরবর্তী যেকোন লং ট্রেন্ডের টার্ন পয়েন্ট। সাইডওয়ে ট্রেন্ডে সাধারণত
ট্রেডিং করে ভাল সুফল পাওয়া যায় না।
ট্রেন্ড
লাইনে কিভাবে ট্রেড করবেনঃ
====================================================
“The trend is your friend” এই পুরতন কিন্তু অত্যন্ত জরুরী একটি কথা। অর্থাৎ ট্রেন্ড যে দিকের
ফলোয়ার আপনিও সেই দিক ফলো করবেন। ট্রেন্ড লাইন আলাদা কোন টেকনিক নয় বরং আপনি যে সব
স্ট্রেটিজি জানেন সেগুলো কার্যত করবেন সঠিক একটি ট্রেন্ড লাইন আঁকার মাধ্যমে।
সাপোর্ট এবং রেসিসটেনসে আপট্রেন্ড, ডাউনট্রেন্ড এবং
রেঞ্জবাউন্ডসহ সকল অর্ডারকে নিশ্চিত করার জন্য ট্রেন্ডলাইন ব্যবহার খুবই দরকারি।
ট্রেন্ড লাইন আঁকার পর যখন দেখবেন ৩-৪টি
করে টপ-বটম বাউনসিং করে ফেলেছে তখন অপেক্ষায় থাকবেন ট্রেড রিভার্সেলের জন্য।
অর্থাৎ ট্রেন্ড যখন তার ক্রমাগত গতি থেকে বের হয়ে যায় বা ক্রমাগত গতি পরিবর্তন করে
আরেকটি নতুন ট্রেন্ড শুরু করে। আপট্রেন্ড লাইন ব্রেকে সেল করতে পারেন এবং ডাউন
ট্রেন্ড লাইন ব্রেকে বায় করতে পারেন। তবে অর্ডারের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন ট্রেন্ড
লাইন ব্রেক করেছে কিনা।

৯/২৭/২০১৫
Unknown
Posted in: 




0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন